Header Ads

Header ADS

বিবাহিত পুরুষ


বিয়ের পর একজন নারীকে নানান রকম প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হয়।  সেটা আমরা সবাই জানি তবে যে ব্যাপারটা বরাবরই আমাদের চোখের আড়াল রয়ে যায় তা হলো একজন নারীর মতো একজন পুরুষকে ও কিন্তু পরিবর্তিত জটিল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হয়।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা নারীর চেয়ে ও বেশি। 

শাশুড়ী- বৌ এর টানাপোড়েন নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সব সমাজেই কম বেশি বিদ্যমান। আর এই টানাপোড়েনের মাঝে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হন যে মানুষটি, তিনি স্বামীপুরুষ। 

একটা মেয়েকে যেমন নিজের চেনা পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়, তেমনি পুরুষটার ক্ষেত্রে ও কিন্তু তার চারপাশের পরিবেশ বদলাতে শুরু করে। 

মেয়েটাকে যেমন আতশ কাঁচের নীচে ফেলে পরীক্ষা করা হয়- ঠিকভাবে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারছে কিনা, ছেলেটাও তেমনি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকে- কে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মা না বৌ। 

বিয়ের পর একটা ছেলেকে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি শুনতে হয় তা হলো " বদলে গেছো।" ৬মাস পার না হতেই বৌ এর অভিমান "তুমি আর আগের মতো নাই, বদলে গেছো। " অন্যদিকে বৌ এর পক্ষ নিয়ে মা কে কিছু বলতে গেলেই মায়ের অভিযোগ " হ এখন তো কইবি ই, তুই তো আর আমগোর নাই বদলায় গেছস। " 

আমরা প্রায়ই বলি মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না।  কথা সত্য।  তবে একটা মেয়ের বেলায় কথাটা যতখানি সত্য ঠিক ততখানিই সত্য একজন বিবাহিত পুরুষের বেলায়ও।  

এখনো আমাদের দেশে প্রধানত পুরুষদেরই সংসারের  ভার  নিতে হয়।  সাধ্যের মধ্যে সকলের চাহিদা পূরণ করতে যেয়ে কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে তারা সহজে পরিবারের কারো সাথে সেটা শেয়ার করতে চায়না।  এটা হতে পারে দুটো কারণে :

  • প্রথমতঃ তারা পরিবারের কাউকে টেনশনে ফেলে দিতে চায়না, চেষ্টা করে নিজেই সমাধান করতে। 
  • দ্বিতীয়তঃ তারা কোনো সমস্যায় আছে, সেটা সমাধান করতে পারছেনা বা কারো চাহিদা মেটাতে পারছেনা এটা তাদের পৌরুষ বা অহমবোধে আঘাত হানে। 
মেয়েরা সাধারণত বাবার বাড়ি গেলে বা পুরোনো বন্ধুদের পেলে কথার ঝাঁপি খুলে বসে। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ ভাগ করে নেয়। গার্লস গ্রূপগুলোতে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়, শাশুড়ী-ননদ, স্বামী ছাড়া অন্য কোনো টপিক সেখানে খুঁজে পাওয়া ভার। 

আমি বলছিনা যেখানে সেখানে, যার তার সাথে সব কিছু শেয়ার করুন। তবে কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন  ঘরের মানুষের সাথে সব শেয়ার করা যায়না। কখনো এমন হয় যে, ভুলটা মা'র কিন্তু বৌ কে তো আর সেটা বলা যায়না, আবার একইভাবে মায়ের কাছে ও বৌ এর ভুল বলা যায়না।  কাকে বলবেন, দু'জনেই তো আপনার।  একজনের কাছে আর একজনকে ছোট করতে গেলে যে নিজেকেই ছোট হতে হয়।  

এমন পরিস্থিতিতে খুব কাছের, বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর কাছে নিজের সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারেন।  আসলে সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারলে মনটা অনেক হালকা হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজের ঘরের মানুষগুলোকে সমস্যাটা ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারেন।  

সময় এসেছে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এইসব চক্রবুহ্য থেকে বেরিয়ে আসার।  পুরুষ বলেই যে আপনাকে সবসময় ইস্পাত কঠিন থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।  সমস্যা হলে আপনজনের সাথে শেয়ার করুন, বুঝিয়ে বলুন।  

"পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই " তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিন এইসব প্রাচীন প্রবাদ।  মন খুলে হাসুন, মন খুলে কাঁদুন। পরিবারের ভার যখন আপনার উপর তখন আপনি ভালো না থাকলে আপনার আপনজন ভালো থাকবে কেমন করে।  

No comments

Powered by Blogger.