Header Ads

Header ADS

ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি : ছেলে শিশুর বেলায় ও আপনি সমান সচেতন তো


অভিভাবকদের কাছে এখন সবচেয়ে বিভীষিকাময় দু'টো শব্দ হলো "ধর্ষণ" এবং "ছেলেধরা।"  ছেলেধরার ব্যাপারে মা-বাবা ছেলে এবং মেয়ে উভয় সন্তানের প্রতি সচেতন, তবে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির বেলায় যতোটাই সচেতন মেয়ে শিশুর বেলায়, ঠিক ততোটাই উদাসীন ছেলে শিশুর বেলায়। 

"ধর্ষণ" শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে ওঠে তা হলো ভিকটিম একজন মেয়ে আর ধর্ষক বা নিপীড়ণকারী কোনো ছেলে বা পুরুষ।  আমাদের চারপাশে নিত্য ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে এমন দৃশ্যই আমাদের মানসপটে গেঁথে গেছে।  

পরিচিত বা নিকটাত্মীয়ের কোলেও এখন আমরা আমাদের মেয়ে শিশু কে দিতে দ্বিধাবোধ করি। কিন্তু আমাদের ছেলে সন্তানের বেলায়ও কি আমরা ততোটা সচেতন হয়েছি ? 

ছেলে শিশুদের বেলায় সচেতন না হওয়ার পেছেন আমাদের মিডিয়া অনেকাংশে দায়ী। মেয়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা এবং তা থেকে সচেতন থাকার নানান পদক্ষেপ নিয়ে মিডিয়া যতোটা গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশ করে ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে তারা ততোটা সরব নয়।

 মিডিয়া আমাদের সেটাই দেখায় যেটা আমরা দেখতে চাই। ধরুন, কোথাও আগুন লেগে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটল, মিডিয়া তখন যেখানে যত আগুন লাগার ঘটনা ঘটে সব গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। আবার যখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠে, তখন সেই জাতীয় সংবাদগুলোই হেডলাইন হয়। 

একই ভাবে ধর্ষিতা নারী বা মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে মিডিয়া সরব হলেও ছেলে শিশুর বেলায় ততোটা নয়। তাই  অবচেতনভাবেই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের মধ্যে সেভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। 

আমাদের দেশে ছেলে শিশু ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির ঘটনা নেহায়েত কম নয়।  BSAF ( Bangladesh Sishu Adhikar Forum ) এর রিপোর্ট অনুসারে গত বছর ১৯.৯% মেয়ে শিশুর বিপরীতে ৭.৭% ছেলে শিশু যৌন হয়রানির   শিকার।  আমরা সবাই জানি, রিপোর্টে যে সংখ্যাটা আসে বাস্তব সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। বাস্তব সংখ্যাটা সামনে আসতে পারেনা প্রধানত দু'টি কারণে:

  • প্রথমতঃ উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে সাধারণত মান-সম্মানের ভয়ে তারা চুপ থাকেন।  তাছাড়া অধিকাংশ ঘটনাগুলোই ঘটে নিকটাত্মীয় বা পরিচিত কারো দ্বারা, তাই চাইলেও সবসময় অভিযোগ গঠন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। 
  • দ্বিতীয়তঃ নিম্নবিত্ত পরিবারেও অনেকেই মান-সম্মানের ভয়ে চুপ থাকলেও যে দু'একটা ঘটনা সামনে আসে তার বেশিরভাগই টাকা দিয়ে মধ্যস্ততার মাধ্যমে আপোষ-রফা করা হয়।  

প্রায় সব ক্ষেত্রেই যৌন হয়রানির শিকার শিশু কিশোরেরা তার সাথে ঘটে যাওয়া জঘন্যতম ঘটনার কথা মা-বাবা, বা অন্য কাউকে বলতে পারেনা। অনেক সময় তারা ভয় পায়, মা-বাবা তাকে বিশ্বাস করবে তো, তাকেই ভুল বুঝবেনা তো? তাই সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কিছু বলতে চাইলে মন দিয়ে শুনুন, তাকে বিশ্বাস করুন।  

আমরা বাইরে থেকে সবসময় বুঝতে পারিনা, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সব ঠিক হয়ে গেছে, তবে এইসব ঘটনা ওই ছোট্ট শিশুর মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে যা তাকে বয়ে বেড়াতে হয় সারাটা জীবন। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।  

আপনার মেয়ে শিশুকে যেমন নিকটত্মীয় বা পরিচিতজনদের কাছে দেয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন ছেলে শিশুটির বেলায় ও ততোটাই সচেতন হোন। মেয়ে শিশুটির মতোই ছেলে শিশুকে ও শেখান গুড টাচ, ব্যাড টাচ এর পার্থক্য। 

আর একটা ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া খুব জরুরি। এই ঘুণে ধরা বিকারগ্রস্ত সমাজকে চাইলেই আমরা বদলাতে পারিনা, তবে চাইলেই পারি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দিতে। 

আমাদের সন্তানরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের খুব ছোটবেলা থেকেই নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ শেখাতে পারি, সর্বোপরি তাদেরকে সত্যিকার অর্থে মানুষ করে গড়ে তুলতে পারি, একমাত্র তাহলেই আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি একটা সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের।  

No comments

Powered by Blogger.